
আবারও ল্যাবরেটরি আন্দোলনে পরিণত হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কর্মসূচি। আর লাঠি হাতে রাজপথে অবস্থান করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। বলতে গেলে পুরো ঢাকাই এখন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের দখলে।
গত ২৬ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পরই সরকার এই কর্মসূচি বানচালের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে সরকারের বাধার মুখে পণ্ড হয় আঠারো দলের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে প্রায় দুই বছর যাবত আন্দোলন চালিয়েও কোনো সফলতা পায়নি বিরোধী দল। তাই দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ কর্মসূচি হিসেবে এই লংমার্চ সফল করতে নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন ১৮ দলীয় জোট নেত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের প্রবল প্রতিরোধ এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এখনো সফলতার মুখ দেখেনি বিরোধী দলের কর্মসূচি।
ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি যাই থাকুক না কেন তা প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই কোণঠাসা করে দেওয়া হয় বিরোধী দলকে। বৃহস্পতিবার মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রোববার সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয় ও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমবেত হয়ে মিছিল ও সমাবশে করেছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন।
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, বিরোধী দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নৈরাজ্য বন্ধ করতে তারা সমবেত হয়েছেন এবং যেকোনো মূল্যেই বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করা হবে।
এদিকে সাধারণ মানুষতো দূরের কথা বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয় রয়েছে সম্পূর্ণরূপে নেতাশূন্য। আর গুলশানে চেয়ারপার্সনের বাড়ি ঘিরে রেখেছে আট প্লাটুন পুলিশ। সেখানেও নেই বিএনপিকর্মীদের কোনো তৎপরতা।
সকালে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের একটি মিছিল সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে জলকামান ব্যবহার করে তাদের আদালত চত্বরেই আটকে দেয় পুলিশ।
অন্যদিকে প্রেসক্লাবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাংবাদিকদের সমাবেশে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
এছাড়া রাজধানী জুড়ে সর্বত্রই বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে তৎপর ছিলেন আওয়ামী নেতাকর্মীরা। যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, গাবতলী, আমিনবাজার ও কেরানীগঞ্জসহ নগরীর আটটি প্রবেশপথে অবস্থান আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আর এসব এলাকায় ঢাকামুখী যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ।
সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশেপাশের এলাকায় কয়েকশ’ নেতাকর্মী দফায় দফায় লাঠি মিছিল করেন।
সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধূরী মায়া খালেদা জিয়াকে বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া তার নেতাকর্মীদের বলেছেন, জীবন দিয়ে হলেও সমাবেশে হাজির হতে। কিন্তু বিএনপি ও তাদের জোটের কোনো লোকই আজ রাস্তায় নেই।
একই প্রসংগে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, “বিরোধী দলের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া। তাই জনস্বার্থেই পুলিশ যথাযথ অবস্থান নিয়েছে”।
এদিকে বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কয়েকজন জেলে রয়েছেন বাকিরাও আছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে।
এসএসআর/এআর