বর্ধিত মজুরি পরিশোধে মালিকপক্ষের নানা অজুহাত

  • Emad Buppy
  • December 26, 2013
  • Comments Off on বর্ধিত মজুরি পরিশোধে মালিকপক্ষের নানা অজুহাত
পোশাক শ্রমিক

পোশাক শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন করে আবার গড়িমসি শুরু হচ্ছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ঘোষণা করা বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা তুলছেন পোশাক মালিকেরা। তাতে আবার নতুন করে বেতন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

গত ৪ নভেম্বর নিম্নতম মজুরি বোর্ড ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে। তবে নানা ছলছুতায় সময় ক্ষেপণের পর ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় অবশেষে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো মেনে নেয় বিজিএমইএ।

ঘোষিত মজুরি কাঠামো চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। যা শ্রমিকরা পাবেন জানুয়ারি মাসে।

বেতন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে মালিকরা বলছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে পণ্য জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। রপ্তানি আদেশ না পাওয়ায় বহু কারখানায় কাজ থাকছে না। পুলিশি পাহারায় পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেশি দিয়ে পণ্য পাঠানো হলেও তা হাই ওয়েতেই পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া নানা কারণে নভেম্বর থেকে কারখানাগুলোতে কাজ কম হওয়াকে দায়ী করছেন তারা।

ঘোষিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম বলেন, কারখানাগুলোতে কাজ নেই। উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বেতন দিতে সমস্যা হবে। ১ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ দিনে কারখানাগুলোতে ১৭ দিন কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এতে জানুয়ারি মাসে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানা বেতন দিতে সমস্যা পড়বে। আর রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও প্রকট হলে ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ শতাংশের বেশি কারখানা সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন তিনি। তবে মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিতে প্রচেষ্টা চালাবেন বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম অর্থসূচককে বলেন, কাজ না থাকার কারণে বিকেএমইএর ৮টি কারখানা ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক মাসের মধ্যে সংগঠনটির ৩০ শতাংশ কারখানা বন্ধের উপক্রম হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, পোশাক কর্মীদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো একতরফাভাবে বৃদ্ধি করে নিম্নতম মজুরি বোর্ড এই শিল্পকে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেও মনে করেন তিনি।

শ্রমিক পক্ষের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ঘোষিত মজুরি কাঠামো মালিকরা বাস্তবায়ন করবে। কারণ এই অস্থিরতা সাময়িক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মালিকরা আবার ভালো ব্যবসা করতে পারবেন। তাতে তারা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলেও মনে করেন তিনি।

গত ৫ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা অনুযায়ী, শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরির মধ্যে মূল বেতন ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বাসাভাড়া ১ হাজার ২৮০ টাকা, যাতায়াত ২০০ টাকা, চিকিৎসা খরচ ধরা হয়েছে ৩২০ টাকা । এছাড়া অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা।
তবে এ সময় শ্রমিক সংগঠনগুলোও এ ঘোষিত  মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে। এদিকে, ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে ১২টি শ্রমিক সংগঠন সংবাদ সম্মেলনও করে।  এ সময় দাবিদাওয়া দিয়ে  নানা কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয় তারা।

এর ১৫ দিন পরে  মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করা হলে আবার তারা তা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি চলতি মাস থেকে কার্যকর করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।