লংকাবাংলা ফিন্যান্সের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীতির তথ্য গোপন করে তাদের পাপের ভাগিদার হয়েছে এর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগসাজসেই ব্যাংক বহিঃভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা বাষিক হিসাব কারসাজি করতে পেরেছে।চেষ্টা করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখ থেকে নানা অনিয়ম আড়াল করে রাখতে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অনেক অনিয়ম বের হয়ে এসেছে। এ অপরাধে ইতোমধ্যে লংকাবাংলাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।এবার অপকর্মের সহযোগী সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানিকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এমনটি হলে আগামি দুই বছরবাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান,সহজ কথায় ব্যাংক,ব্যাংক-বহির্ভূত আথিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কাজ করতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ,লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের খেলাপি ঋণের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে গোপন করে তার বিপরীতে প্রভিশনিং সংরক্ষণ না করা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন লঙ্ঘন করে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনসহ নানাবিধ অনিয়মের তথ্য উদঘাটন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্ক দল।লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি এ প্রতিষ্ঠানটি এসব অবৈধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রচলিত হিসাব রীতি, আইন ও বিধিবিধান অমান্য এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারিকৃত বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা লংঘন করেছে। কিন্তু এসব তথ্য প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানি উদঘাটনে ব্যর্থ হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে। আর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সেটিও যুক্তিসঙ্গত নয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
তাই প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা হতে অন্ততঃ দুই বছরের জন্য বাদ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৯৩ এর ৪১ ধারার আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচলিত রীতি,আইন ও বিধি বিধান অমান্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় লংকাবাংলাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি লংকাবাংলার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগ।এ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে প্রদত্ত বৃহদাঙ্ক ঋণ ব্যালেন্স শিটে ঋণ ও অগ্রিম খাতে অন্তর্ভূক্ত না করে অন্যান্য সম্পদে অন্তর্ভূক্ত করেছে।তাছাড়া প্রদত্ত বৃহদাঙ্ক ঋণকে প্রতিষ্ঠানটির আমানতের সাথে নেট অফ করে ব্যালেন্স শিটে অন্যান্য সম্পদের মধ্যে রিসিভেবল হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে যা প্রচলিত হিসাব রীতির পরিপন্থী।
প্রদত্ত ঋণ সংক্রান্ত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলকৃত খেলাপি ঋণের বিবরণীতে গোপন করা হয়েছে যা ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইস্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি বিভাগ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।অথচ ২০১২ ভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রযোজ্য সব আইন ও নির্দেশনা পরিপালন করা হয়েছে মর্মে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানি প্রত্যয়ন করেছে।তাছাড়া প্রদত্ত ঋণের ওপর কোন প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়নি।
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড শ্রীলংকার সাম্পাথ ব্যাংক লিমিটেডের সাথে মার্কিন ডলারে নস্ট্রো হিসাব পরিচালনা করেছে যা ফরেক্স এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ এর ৪ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৯৩ এর ১৪(১)(খ)ধারার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।
তবে মেসার্স সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল কর্তৃক এসব অনিয়ম উদঘাটনের আগেই তারা তা সনাক্ত করেছে।লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাথে তাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে দ্রুততার সাথে উক্ত ঋণকে ‘ঋণ, লিজ ও অগ্রিম’ খাতে প্রদর্শন পূর্বক ২০১৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকে সিএল বিবরণীর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রদান করে আসছে।