রাজশাহীতে নির্বাচনী আমেজ নেই

logo-rajshaiআগামি ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর মাত্র ১৪ দিন বাকি। কিন্তু রাজশাহীতে তেমন কোনো নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রধান বিরোধীদল নির্বাচনে না আসায় বেশির ভাগ আসনে একক প্রার্থী থাকাকেই এর কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণত নির্বাচনের আগের এই সময়ে প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে যায় মহানগরীর বিভিন্ন ভবনের দেয়াল। কিন্তু এবার সেখানে জায়গা করে নিয়েছে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির পোস্টার। চায়ের দোকান, হোটেন কিংবা অফিসের আড্ডায় নেই নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা। নেই প্রার্থীদের গনসংযোগ কিংবা সভা, সমাবেশ। শধু  ভোটারই নন, প্রার্থীদের মাঝেও নেই কোন বাড়তি উৎসাহ। দায়সারা গোছের নির্বাচনী ক্যাম্প আর পোস্টার ছাপানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের প্রচারণা।

এমন সময় নির্বাচনী উৎসবমুখর থাকার কথা, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা আর জনসংযোগে যেখানে প্রার্থীদের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার কথা। কিন্তু এবার উলঠো হয়েছে গেছে। উৎসবমুখর থাকার কথা কিন্তু তেমনটা নেই রাজশাহীতে।

রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটিতে নির্বাচন। এ দুটি আসনেও আওয়ামী লীগের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আর বাকি চারটি আসনে একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন প্রার্থীরা। তাই রাজশাহী জেলায় নির্বাচনী পরিবেশ বলতে তেমন কিছু চোখে পড়ার মতো নেই।

বিরোধী দল নির্বাচনে না থাকায় নির্বাচনে নেই কোনো আমেজ। তাই একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভোটাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকার কাপড় বিক্রেতা শাওনের কাছে জানতে চাই, তিনি ভোট দেবেন কিনা। এক গাল হেসে বললেন, ‘ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সুযোগ নেই।’ কারণ রাজশাহীÑ১ (সদর) আসনে ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মহানগরীর আলুপট্টির মোড়ের চা বিক্রেতা আলিম জানালেন, অন্যান্য সময় এমন সময় শহর জুড়ে বেশ নির্বাচনী আমেজ থাকে। নেতা কর্মীদের পদচারনায় গরম হয়ে উঠে মাঠ। কিন্তু এবার তেমনটা নেই।

সাংবাদিক রমজান জানান,  যেসব আসনে এখানো নির্বাচন হবে সেগুলোও প্রায় সমঝোতার পথে। মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রার্থী নেই৷ তাই তারা বলতে গেলে নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। অযথা জনসংযোগ আর পয়সা খরচ করতে চান না তারা। নেতারা তাই ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পার করার অপেক্ষায় আছেন।

রাজশাহী জেলার চারটি আসনেই প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বাকি দুটি আসনে ব্যাপক নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে।

রাজশাহী-২ (পবা-মোহনপুর) আসনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আয়েন উদ্দিন (নৌকা প্রতীক), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা (কলস প্রতীক) ও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বাচ্চু (লাঙল প্রতীক) নিয়ে দশম জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়েন উদ্দিন। তার বিপরীতে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। তাই দুজনের মধ্যে নির্বাচনি লড়াই জমে উঠেছে বলে জানান সেখানকার জনসাধারণ। ওই আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছে।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহরিয়ার আলম এমপি (নৌকা প্রতীক) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রায়হানুল হক (প্রজাপতি প্রতীক) নিয়ে নির্বাচন অংশ নিচ্ছেন।

এ আসনে নিজেদের নির্বাচিত করতে দুই প্রার্থী মাঠে নিমে পড়েছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতেছেন প্রার্থীরা। এ আসনে এক আড়ানী বাজারের এক গুড় বিক্রেতা জানান, দু’জনই তো আওয়ামী লীগের লোক। দেখি দেশ শান্ত থাকলে ভোট দিতে যামু।
এদিকে রাজশাহী জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচিতরা হলেন- রাজশাহী-১ আসনে বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী (আ’লীগ), রাজশাহী-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা (ওয়ার্কার্স পার্টি), রাজশাহী-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক (আ’লীগ) ও রাজশাহী-৫  আসনে বর্তমান সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ দারা (আ’লীগ)।