একটি হরতাল অবরোধের সময়সীমা শেষ হবার আগেই ছক এঁকে রাখে আরেকটি হরতাল অবরোধের।ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হরতাল অবরোধের কারণে বেচাকেনা প্রায় বন্ধ থাকলেও থেমে নেই ব্যাংক ঋণের বিপরীতে উচ্চহারে সুদ,কর্মচারির বেতন,দোকান-গোডাউন ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ।গত ২২ দিনে কোন কার্যদিবস পায়নি ব্যবসায়ীরা। আবারও ৭২ ঘন্টা অবরোধ ডাকায় আগামী তিন দিনেও পাবে না কোন কার্যদিবস। রাজনৈতিক এমন কর্মসূচিতে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মাঝে।
গেল ২২ দিনের মধ্যে ১৭ দিনই ছিল হরতাল কিংবা অবরোধ।তিনদিনের সাপ্তাহিক ছুটিসহ বাকি পাঁচদিনেই ছিল সরকারি ছুটি।তাই গেল ২২ দিনে কোন কার্যদিবস পায়নি ব্যবসায়ীরা।মঙ্গলবার ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৭২ ঘন্টা অবরোধ ডাকায় আগামী দিন দিনেও পাবেন না কোন কার্যদিবস।তারপরও যে সব রাজনৈতিক সংকট সমাধান হয়ে যাবে তার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান,দেশের এরূপ অবস্থায় আমদানি-রপ্তানি,উৎপাদন,সরবরাহ ও ব্যবসায়ীক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় অচল প্রতিনিয়ত বাড়ছে লোকসান। মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটায় ঠিক সময়ে পণ্য যেমন বন্দরে পৌছানো যাচ্ছে না তেমনি আনাও যাচ্ছে না আমদানি করা পণ্য। তাই দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ক্ষতির খাতার তালিকা। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোন ধরনের লক্ষন না দেখায় নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করছেন না। তাই পুজিঁর স্বল্পকায় অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার পথে বলে জানিয়েছেন তারা।
শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চিটাগং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম অর্থসূচককে বলেন গেল প্রায় একমাস ধরে হরতাল অবরোধ থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ ছিল ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড শুধু চেম্বার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছ বিশ হাজার কোটি টাকার মতো।তাই হরতালের কারনে আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ব্যাংক সুদ, কর্মচারীদের বেতন,গোড়াউন ও অফিস ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বন্ধ থাকে না।সেই সঙ্গে হরতালে মহাসড়কে নাশকতার ভয়ে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে না পাড়ায় অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়।এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীদের একদিকে যেমন লোকসান বাড়ছে অন্য দিকে কমে যাচ্ছে পুঁজি।
তিনি আরো বলেন,গত ১৫ তারিখে ব্যবসায়ী নেতারা সারাদেশে সাদা পতাকা হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।তার পারও যদি রাজনৈতিক নেতাদের বোধদয় না হলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি হাতে নেব।
তৈরী পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন অর্থসূচককে বলেন,“বিগত ৩০ বছরে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যে সুনাম অর্জন করেছে তা বিগত কয়েক মাসেই ধ্বংস হয়ে গেছে।একদিনের হরতাল কিংবা অবরোধে চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প ব্যবসায়ীদের দৈনিক ক্ষতি হয় ২৫০ কোটি টাকা।শতভাগ রপ্তানিমুখী পোষাক কারখানাগুলো সময়মত কাঁচামাল না পাওয়া, পোষাক কারখানা স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে না পারায় উৎপাদন কমে গেছে ৪০ শতাংশের বেশী।
তিনি আরও বলেন,ক্রেতাদের নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় অর্ডার বাতিল হচ্ছে প্রতিদিন।এদিকে ক্রেতারা ‘নন ডেলিভারি ক্লেইম’ও করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।প্রতি সপ্তাহ জুড়ে হরতাল অবরোধ থাকায় চরম সংকটে মধ্যে আছে দেশের অন্যতম এ শিল্পটি।গত কয়েক মাসে উৎপাদন ৪০ শাতাংশ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে লোকসানের পরিমাণ।রাজনৈতিক নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই।”
খাতুনগঞ্জের মেসার্স মোহাম্মাদিয়া ট্রেডার্স’র সত্ত্বাধিকারী ও ব্যবসায়ী নেতা মোজাম্মেল হক মিন্টু অর্থসূচককে বলেন,“খাতুনগঞ্জে চার সহস্রাধিক দোকান রয়েছে।গড়ে প্রায় নয় থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়।হরতালের কারণে বাজারের বেচাকেনা প্রায়ই বন্ধ থাকে।তবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক সুদ,কর্মচারীদের বেতন,দোকানের ভাড়া, আনুষাঙ্গিক আরো অনেক খরচ থাকে।এসব খরচ মিটাতে না পেরে ইতিমধ্যে কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।আবার যারা আছেন তাদের নিয়মিত লোকসানের কারনে পুঁজি কমে গেছে।নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে না কেউ। ফলে ব্যবসায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক নেতাদের ভাবতে হবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে হরতালের আওতা মুক্ত রাখতে হবে। তা না হলে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।”
চাক্তায়-খাতুনগঞ্জের অন্যান্য ব্যবসায়ী জানান,হরতালে পরিবহন সংকটের কারণে মালামাল যেমন বিভিন্ন জেলা থেকে আসে না তেমনি অর্ডার থাকা সত্ত্বেও ডেলিভারি দেওয়া যায় না।ফলে বাজারে দেখা দেয় পণ্যের সংকট।বাড়তে থাকে সব ধরনের পণ্যের দাম।বেচা-কেনা না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়।