এরশাদের মুক্তির দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ: কাল থেকে বিভাগে ৪৮ ঘন্টার হরতাল

Rangpur Photo(6)(Japa Sanghorso)17-12-13জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় পার্টির ঘাটি রংপুরে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা ১২টায় এরশাদ ঘোষিত জাতীয় পার্টির রংপুর বিভাগের সমন্বয়কারী এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এমপি, জেলা আহবায়ক করিম উদ্দিন ভরসা, জেলা সদস্য সচিব মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর সদস্য সচিব এসএম ইয়াসিরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শাপলা চত্বরে আসলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশী বাধা ভেঙ্গে মিছিলটি কাচারী বাজারের দিকে যাওয়ার সময় পায়রা চত্বরে নিপেনের হোটেলের সামনে আসলে মিছিলের সামনে অতর্কিতভাবে ৪ টি ককটেল বিষ্ফোরণ হয়। এসময় সেখানে অবস্থানরত সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে মহাজোটের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। শুরু  উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সহযোগিতায় রাঙ্গা-কাদেরী গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ নিয়ে জাহাজ কোম্পানী মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ আসিফ-ভরসা-মোস্তফা-মানিক-ইয়াসির গ্রুপের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা সালেক পাম্পের কাছে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে শাপলা চত্বর পর্যন্ত গিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, শর্টগানের গুলি করে। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মুহুর্তেই দোকানপাটসহ পুরো এলাকা জনশুণ্য হয়ে যায়। এক পর্যায়ে এরশাদ ঘোষিত নেতাকর্মীরা এরশাদের সেনপাড়ার স্কাইভিউ লাঙ্গল ভবন এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়।

সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন আসিফ-মোস্তফা-মানিক-ইয়াসির গ্রুপের গঙ্গাচড়ার বড়বিল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সহ-সভাপতি বৃদ্ধ মনজুম আলী। এছাড়াও পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুর আলম যাদু মিয়া, রিকশা শ্রমিক পার্টির নেতা নুরুল মিয়া, শফি, সামসুলসহ উভয় পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

অন্যদিকে জাহাজ কোম্পানী মোড়ে লাঠিশোঠা নিয়ে অবস্থান নিয়ে সমাবেশে এরশাদের মুক্তির দাবিতে সদ্য বিলুপ্ত জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা বুধবার রংপুর বিভাগের আট জেলায় সকাল সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে তারা পায়রা চত্বরে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বেলা সোয়া দুই টায় জাতীয় পার্টি অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনে আবারও হরতালের ঘোষণা দিয়ে রাঙ্গা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। এসময় জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত কিছু নেতা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে। তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান কাউন্সিল করে আমাদেরকে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটির দায়িত্ব দিয়েছেন। এত অল্প সময়ে আমাদের কমিটিকে বিলুপ্ত করা সেটা আমরা বিশ্বাস করি না। দলের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা নেই এমন গুটিকয়েক মানুষ সাধারণ মানুষকে এরশাদের কথা বলে রাজপথে নেমে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। এসময় তার সাথে ছিলেন সদ্য বিলুপ্ত মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সালাহ উদ্দিন কাদেরী, সহ-সভাপতি আব্দুল লতিব খান, যুগ্ম সম্পাদক সামসুল আলম, যুব সংহতির মহানগর সেক্রেটারী ইউসুফ আলী, ছাত্রসমাজের জেলা সভাপতি নাজমুল হুদা লাভলু, মহানগর সভাপতি সাইফুল ইসলাম রিপনসহ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় পার্টি অফিসের গেটে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি  ও সেক্রেটারীসহ বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে।

অন্যদিকে দুপুরে আড়াইটায় লাঙ্গলভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এরশাদের মুক্তির দাবিতে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন ৪৮ ঘন্টার শান্তিপূর্ণ হরতালের ঘোষণা দেন এরশাদ ঘোষিত কমিটির জেলা আহবায়ক প্রেসিডিয়াম সদস্য করিম উদ্দিন ভরসা। এসময় তার সাথে ছিলেন রংপুর বিভাগের সমন্বয়কারী এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এমপি, জেলা সদস্য সচিব মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব এসএম ইয়াসির, পীরগাছা উপজেলা সভাপতি আনম মাহবুবুর রহমান, পীরগঞ্জ সভাপতি নুর আলম যাদু, বদরগঞ্জ সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, কাউনিয়া উপজেলা সভাপতি আজিজুল ইসলাম মাস্টার, তারাগঞ্জ উপজেলা সেক্রেটারী শাহিনুর ইসলাম মার্শালসহ আট উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, এরশাদ স্যারের জন্য শান্তিপূর্ণ নিরস্ত্র মানুষের বিক্ষোভে আইনশৃংখলা বাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ কিছু মোটর শ্রমিক সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই এরশাদের দেয়া বিলুপ্ত কমিটির পক্ষ হয়ে তাদের সাথে এরশাদভক্ত নেতাকর্মীদের উপর  হামলা চালিয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি নেতা মনজুম আলী গুলিবিব্ধ ছাড়াও শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে এরশাদের মুক্তি দাবী করে এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং সাজানো মামলা প্রত্যাহার এবং জনসাধারনের উপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। তিনি জানান এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর সেক্রেটারী এ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন কাদের বলেন, বহিষ্কৃত নেতারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন আবোল তাবোল বলছে। তারাই এরশাদ প্রিয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে।

পুলিশের এ সার্কেল হুমায়ুন কবির জানান, আইনশৃংখলা বাহিনী কারো পক্ষ নিয়ে নয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। যারা এই নাশকতার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

পুলিশ ও দলীয় সূত্র জানায়, উভয় গ্রুপই এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। যে কোন ধরনের সংঘর্ষ ও নাশকতা এড়াতে নগরীতে আইনশৃংখলাবাহিনীর নজরদারী ও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।

সাকি/