

এদিকে এবাবের এই দিবসটি অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা দায় মুক্তির বোঝা কমিয়ে উৎযাপন করছে জাতি। শীর্ষস্থানীয় এক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে বাঙালি জাতির কলঙ্কমুক্তির সূচনা ঘটেছে। একাত্তরের অন্যতম শীর্ষ ঘাতক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে।
এর আগে থেকে বিচারের রায়ে দণ্ডিত হয়ে আছেন আরও কয়েক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, যারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যায়ও সরাসরি জড়িত। অপেক্ষমাণ রয়েছে আরও দু-একজনের বিচারের রায় ঘোষণাও।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতকচক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ’ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী ব্যক্তিত্বকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে।
পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজারের ইটখোলাতে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় হতভাগ্য এসব বুদ্ধিজীবীর নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কেউ বা অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছিল অনেকের। আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা স্বাধীনতা ছুঁইছুঁই উল্লসিত মানুষ স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল।
একাত্তরের ডিসেম্বরের এই হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজও নিরুপণ করা যায়নি। তবে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে, সে অনুযায়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী ও ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিক-প্রকৌশলী।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য_ ড. জিসি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনওয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লা কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমদ, লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, নূতন চন্দ্র সিংহ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহি, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, সায়ীদুল হাসান, হবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকাল ৭টায় সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর সর্বসাধারণের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও অনুরূপ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণসহ বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়ছে।