দেশে চলমান হরতাল ও অবরোধের কবলে পরেছে অন্যতম প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস পোশাক শিল্প খাত। চলতি ডিসেম্বর মাসের ৯ দিনে খাতটির ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২৬৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া খাতটির বর্তমানের এই নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রসারি বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে রাজনৈতিক এই অস্থিরতার জন্য বেশির ভাগ ক্রেতাই ভিন্ন বাজারে দিকে ঝুঁকছে।
বিভন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদেও দেখা গেছে তেমন বিষয়। আসন্ন বড় দিনকে সামনে রেখে পশ্চিমা বাজারে পোশাকের চাহিদা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। তাই ওই সকল দেশের পোশাক সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতার চাহিদা মেটাতে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে থেকে আলোচ্য সময়ে বেশ কিছু নতুন অর্ডার করিয়েছে।
এ সম্পর্কে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতা শহীদুল্লাহ আজিম চলমান রাজনৈতিক সংকট, পোশাক শিল্পে অস্থিরতা, রপ্তানি আদেশ বাতিলসহ পণ্য পরিবহন সংকটকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, সামগ্রিক অস্থিরতায় কারখানা মালিকেরা কাজের অর্ডার পাচ্ছেন না। এ সময়ের মধ্যে ২০ টি কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, যার পরিমাণ প্রায় ২৪ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।
আর সময় মতো পণ্য পৌঁছাতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। আবার আকাশ পথে পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। জাহাজী করণে বিলম্ব মাশুল ৬৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, ভাংচুর-নৈরাজ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন আজীম।
তিনি বলেন, দেশে চলমান অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে কারখানা মালিকরা তাদের পণ্য পরিবহন করতে পারছে না। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে ব্যবসার পরিধি কমিয়ে আনছে। ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশের প্রতি নজর দিচ্ছেন তারা। ফলে ক্রমেই রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহে ঢাক-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে ৫ হাজারের বেশি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন করতে পারে। অবরোধের মধ্যে সেখানে ২ হাজার ট্রাক/কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে কারখানাগুলোতে পণ্য আটকে থাকছে।
আবার পণ্যবাহী ট্রাক/কাভার্ডভ্যানের চালকেরা অবরোধের কারণে নিরাপত্তার ভয়ে গাড়ি চালাতে চাচ্ছেন না।
তবে ওই সময়ে পুলিশি নিরাপত্তায় কিছু পণ্য পরিবহন করলেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আবার তাতে হচ্ছে কয়েকগুন বাড়তি খরচ।
১৬ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ৩৫ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে মালিকদের। এতে উৎপাদন খরচ কয়েকগুন বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ মালিকদের। আবার পোশাক-কারখানাগুলতে নাশকতার কারণে উদ্বিগ্ন মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা।
বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিকেএমইএভুক্ত সদস্যদের কারখানায় হরতাল-অবরোধে অন্তত ৩০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। উৎপাদন আদেশ না পাওয়ায় মালিকেরা শ্রমিকদের কাজ দিতে পারছেন না। কাজ না থাকায় গতি হারিয়ে ফেলতে বসেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ক্রেতারা ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঝুঁকছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পোশাক মালিকেরা বলছেন, বছরের এই সময়টাতে সব চেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। বড় দিনকে সামনে রেখে রপ্তানির ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তবে চলমান পরিস্থিতির কারণে এবার শিল্পে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভরা মৌসুমে কাজ হারাচ্ছেন কারখানা মালিকেরা।
মালিকেরা জানান, পুলিশি পাহারায় পণ্য পরিবহন হলও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে মালবাহী ট্রাক আগুনে পুড়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এতে করে আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।