
পুঁজিবাজারে নির্বাচনী বুদ্বুদ হঠাৎ ফেটে গেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সংঘাতেময় পরিবেশেও বাড়ছিল শেয়ারের দাম। তর তর করে উপরে উঠছিল সূচক। তবে বুদ্বুদ বড় হতে হতে ফেটে গেছে। গত তিন কার্যদিবস ধরে টানা দর পতন হয়েছে বাজারে। রাজনৈতিক অচলাবস্থার উন্নতি না হলে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
অক্টোবরের শেষ ভাগ থেকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে শেয়ারের দাম ও মূল্যসূচক। এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৪০ পয়েন্ট বা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৪ অক্টোবর এ সূচকের অবস্থান ছিল তিন হাজার ৭৯৯ পয়েন্টে। এক মাসেরও কম সময়ে গত ১০ নভেম্বর তা বেড়ে চার হাজার ৪৩৯ পয়েন্টে উঠে যায়। এ সময় ২০ কর্মদিবসের মধ্যে ১৫ দিনই বাজার ছিল উর্ধমুখী। উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে ভাল-মন্দ সব শেয়ারের দাম। ২০১০ সালের পর এমনটি আর দেখা যায় নি।
২০১০ সালের ধসের পর থেকেই দীর্ঘ মন্দা পুঁজিবাজারে। মাঝে মধ্যে বাজার কিছুটা উর্ধমুখী হলেও তা ঝলক দেখিয়েই থেমে গেছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক ধারা বিরাজ করছে। চলতি বছরে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন দিক থেকে পুঁজিবাজারের জন্য অনুকূল আবহ তৈরি হয়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখী অবস্থানে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাজার তলানীতেই পড়ে থাকে। কিন্তু গত মাসের মাঝামাঝি ভোজবাজির মত পাল্টে যায় এ দৃশ্যপট। দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ বাড়তে থাকে বাজার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনের আগের সময়টুকু ভাল দেখতে চেয়েছে সরকার। ভোটের হিসাব-নিকাশ থেকেই সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়। আইসিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে বাজারে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর শেয়ার কেনার দর অনেক বেশি হওয়ায় তাদের একটা বড় অংশ এ দরে তা বেচে ধরে রাখতে চাইলে চাহিদা-যোগানের ভারসাম্যহীনতায় শেয়ারেরর দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়ে গেলে নতুন বছর থেকে বাজার ভাল যাবে এমন আশাবাদে বিদেশী বিনিয়োগও কিছুটা বাড়ে এ সময়ে। অন্যদিকে গত ২৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিজস্ব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। সম্ভাব্য বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই সময় পর্যন্ত বিএসইসিও বাজারকে কৃত্রিমভাবে চাঙা রাখার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কার্যত ওই দিন থেকেই বাজারে দর পতন চলছে।
সংশ্লিষ্ট কারো কারো মতে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসছে না এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এক তরফা নির্বাচনে ভোটের কোনো হিসাব-নিকাশ করতে হবে না। তাই শুরুতে কৃত্রিমভাবে বাজারকে চাঙা রাখার জন্য সরকারি এজেন্সিগুলো যতটা মরিয়া ছিল, এখন ততটা তাগিদ নেই। তাদের সপোর্ট শিথিল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এতদিন পর্যন্ত যারা বিশ্বাস করছিলেন শেষমুহুর্তে হলেও সমঝোতা হয়ে যাবে, তারাও এখন আশা ছেড়ে দিয়েছেন। গত সপ্তাহে অবরোধের নামে যে নাশকতা হয়েছে তাতে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে এমন আশংকা অনেকের। এসবের খোঁচাতেই বুদ্বুদ ফেটে গেছে।