
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর, শুল্ক ও মূসক বিভাগে বিভিন্ন সময়ে আদালতে বিচারাধীন ২৮ হাজার মামলার বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির (এডিআর) মাধমে ৩০ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা সম্ভব। এজন্য রাজস্ব বোর্ডের জন্য আলাদা একটি লিগ্যাল উইং বা ইন্টেলিজেন্স সেল থাকা প্রযোজন।
শনিবার রাজধানীর সোনার গাঁও হোটেলে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন আয়োজিত ‘আয়কর বিষয়ক বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি’ কর্মশালায় এ কথা জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন।
অনুষ্ঠানে এডিয়ার নিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এনবিআরের দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব কালিপদ হালদার। কর্মশালায় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন বিভাগের সদস্য, সচিব, করাঞ্চলের কমিশনার এবং বিভিন্ন করাদাতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৩০ হাজার কোটি টাকার মামলা অনিস্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে আয়করে ৪ হাজার, শুল্ক বিভাগে ২৪ হাজার এবং মূসক বিভাগে ২ হাজার কোটি টাকা। সবগুলো বিভাগের ২৮ হাজারের অধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও আইনজীবিদের অবহেলায় দীর্ঘদিন যাবৎ এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। আর এ কারণে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে।
তিনি আরও বলেন, আদালতে মামলা চলমান থাকলে মামলার খরচের জন্য আইনজীবিরা প্রতিনিয়নত একটা বড় অংকের টাকা পান। তাই তারা সহজে মামলা হাতছাড়া করতে চান না। এজন্য চলমান এডিআরে তাদের জন্য সুবিধা রাখলে তারা এ পদ্ধতির সাথে যুক্ত হবে।
এডিআরের কাজের হিসেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক বছরে মাত্র ১৯৭ টি মামলার নিস্পত্তি হয়েছে। যা আশা ব্যঞ্জক নয়। আর যা নিস্পত্তি হয়েছে তা শুধুমাত্র আয়কর বিভাগের মামলা। শুল্ক বিভাগের ১০ হাজার মামলার মধ্যে মাত্র ৩৫টি মামলা এডিআরে এসেছে। তবে আমাদের নিজস্ব আইনি সেল থাকলে এসব মামলা আরও অধিকহারে এডিআরের অন্তর্ভূক্ত করা যেত।
এনবিআরের নিজস্ব আইনজীবি না থাকায় নিজেকেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় উল্লেখ্য করে তিনি জানান, আমাকেও ৪০০ মামলায় হাজিরা দিতে হয়। এক্ষেত্রে আমাকে ব্যাক্তিগত আইনজীবি নিয়োগ করতে হয়। তাই রাজস্ব বোর্ডের মামলার কার্যক্রম গতিশীল করতে এনবিআরের সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবি নিয়ে আলাদা সেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়তার কথা জানান তিনি।
মূল প্রবন্ধে এডিয়ারের দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্য কালিপদ হালদার বলেন, ২১২টি মামলা এডিআরের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আর নিস্পত্তি হয়েছে ১৯৭টি। যার ৬০৩ কোটি পাওনা থেকে আদায় হয়েছে ৬৫ কোট টাকা। আগামি বছর তিন হাজার কোটি টাকা এডিআর থেকে আয় হবে। আরও্ জোড়ালোভাবে মাঠে নামলে ও মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে পারলে আটকে থাকা ৩০ হাজার কোটি টাকা অতিশীঘ্রই আদায় করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এনবিআর ২০১২-১৩ অর্থবছর আদালতের বাইরে সমঝোতার ভিত্তিতে সহজ উপায়ে কর মামলা নিষ্পত্তিতে এডিআর সংক্রান্ত সেল গঠন করে। ১ জন সচিবের নেতৃত্বে ৩ জন রাজস্ব কর্মকর্তার সম্বন্বয়ে এ সেল গঠন করা হয়। এনবিআর কর্মকর্তা, সদস্য ও মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ ১৮ সদস্য নিয়ে এ প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। এ পদ্ধতি প্রথমে করদাতারা গুরুত্ব না দিলেও চলতি বছরের জানুয়ারির পর থেকেই আগ্রহী বাড়তে থাকে। স্বল্প সময়ে ও গ্রাহকের কোনো প্রকার হয়রানি না থাকায় অল্প সময়ে ব্যবসায়িরা বকেয়া কর দিতে আগ্রহী হচ্ছে। আবেদনের মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় বিধায় এ পদ্ধতিতে মামলা জটিলতা ও রাজস্ব আদায়ে গতি এসেছে বলে জানা গেছে।
এ পদ্ধতিতে একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী দুটি পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেবেন। উভয় পক্ষ এ রায় মানলে বিরোধটি নিষ্পত্তির পর্যায়ে চলে যাবে। যদি কোন পক্ষের আপত্তি করেন তাহলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। মধ্যস্থতাকারী রায় মানতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই । এ পদ্ধতির মাধ্যমে অতি স্বল্প সময়ে মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।
নয়ন