
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভয় দেখাবেন না। ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। পাটকেল কীভাবে ছুড়তে হয়, সেটা আমরা জানি। হরতালের রাজনীতি ও সহিংসতার রাজনীতি করতে চাই না বলেই আমি নির্বাচনে এসেছি।’
আজ বিকালে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় যুব সংহতি আয়োজিত এক সমাবেশে এরশাদ এ মন্তব্য করেন। ‘সর্বদলীয় সরকারে’ যোগ দেওয়া মন্ত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য আজকের ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
এরশাদ কিছুদিন আগ পর্যন্ত বলে আসছিলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। আজ বলেছেন তিনি একা নির্বাচন করছেন না। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করে না, কোনো কোনো দল বাকি থাকে। তিনি নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ কারও ক্ষমতায় যাওযার সিঁড়ি হিসেবে তিনি ব্যবহূত হবেন না।
এরশাদ তাঁর বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সরকারেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জালেম। আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি বলেন, তাঁর দলের সাতজন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়েছে। তাঁর ভাষায় এ সরকার আওয়ামী লীগ সরকার নয়। তাঁর দলের লোকজনও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী নন। তাঁরা সর্বদলীয় সরকারের অংশ এবং জাতীয় পার্টির নেতা।
গত সোমবার নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়ায় এরশাদ ব্যাপক সমালোচিত হন। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তীর্যকভাষায় তাঁর সমালোচনা করে। আজই প্রথম এরশাদ এসব বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি অপরাধ কি করেছি? কেন সমালোচনা করছেন? আমি কোনো জোট করি নাই। কোনো লিখিত চুক্তি করি নাই। আমি ইচ্ছে করেছি, নির্বাচনে যাব। কি অন্যায় করেছি? আপনাদেরও নির্বাচনে আসতে হবে। বিকল্প পথ নেই।’ তিনি বলেন, নির্বাচন না হলে মিলিটারি ক্যু হবে। তিনি আর সবার মতো মিলিটারি ক্যু হোক তা চান না।
গতকাল শুক্রবার ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তফসিল ঘোষণা হলে দেশ অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন। এরশাদ এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কেন অচল করবেন? দেশে কি দুর্ভিক্ষ হচ্ছে, মহামারি হচ্ছে? তাহলে কিসের জন্য হরতাল? ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অবরোধ করবেন? কার ক্ষতি হবে? পোর্ট বন্ধ থাকবে। দিনমজুরের ক্ষতি হবে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না। আপনাকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য ওরা কেন কষ্ট করবে? আমি দুর্বল নই। আমার লাখো কর্মী দেশের জন্য দেশের মাুনষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। আমি সেনাপতি, আমি সৈনিক। আমি কাউকে ভয় পাই না’।
এরশাদ আরও বলেন ১৯৯১ ও ১৯৯৬ নির্বাচনের সময় তিনি কারাগারে ছিলেন, অনুকূল পরিবেশ ছিল না। তবু তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে অংশ না নিলে তাঁর দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদারসহ অন্যরা। সমাবেশ থেকে এরশাদের সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সমাবেশস্থলে আজ পুলিশি নিরাপত্তা ছিল।