বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বাড়াচ্ছেন তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ। অক্টোবর মাসে সেপ্টেম্বরের তুলনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৭১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছেন ১৬৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকার। এর বিপরীতে তারা শেয়ার বিক্রি করেছেন ৮২ কোটি ৯০ লাখ পাঁচ হাজার টাকার শেয়ার। সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি নিট বিনিয়োগ হয়েছিল ৮৪ কোটি ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, নানা কারণে শেয়ারের মূল্যস্তর এখন অনেক নিচে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে ভয়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার বেচে দিচ্ছেন।বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে থাকেন। তারা আশা করছেন, কিছুদিনের মধ্যে হয়ত সংকটের সমাধান হয়ে যাবে। এ আশায় তারা কম দামে শেয়ার কিনে বাজারে তাদের অবস্থান সুসংহত করছেন।
তারা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা তা নির্ভয়ে গ্রহণ করে নেয়। বর্তমানে অনেক শেয়ার আকর্ষণীয় দামে রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
সূত্র আরও জানায়, গত আগস্ট মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছেন ২২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। এর বিপরীতে তারা শেয়ার বিক্রি করেছেন ৬০ কোটি ৯৫লাখ টাকার শেয়ার। ফলে আগস্ট মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর জুলাই মাসে বিদেশি নিট বিনিয়োগ হয়েছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগস্ট মাসে নিট বিনিয়োগ কমেছে ৩৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এদিকে, গত জুলাই মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছিলেন ২৫৭ কোটি এক লাখ টাকার। এর বিপরীতে তারা শেয়ার বিক্রি করেছেন ৬৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার। ফলে জুলাই মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, গত জুন মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছেন ৩৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর বিপরীতে তারা শেয়ার বিক্রি করেছেন ৫৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। ফলে জুনে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
জানুয়ারি মাসে ১৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিদেশী বিনিয়োগকারিরা ৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। ওই মাসে নিট বিনিয়োগ ছিল ৯৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
গত মে মাসে ১৯৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। আলোচিত মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারিরা ৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর বিপরীতে তারা শেয়ার কিনেছেন ২৭৪ কোটি ৫২ লাখ টাকার।
এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছিল ১১৬ কোটি টাকা বা ১৩৯ শতাংশ। এপ্রিল মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ওই মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারিরা ১৩০ কোটি ৯১ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কিনেছেন। এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন মাত্র ৪৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার।
মার্চ মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ১২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন। এর বিপরীতে তারা বিক্রি করেন ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার। ওই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৯০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনে ১৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। এর বিপরীতে তারা বিক্রি করে ৭৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার। ওই মাসে মোট লেনদেন হয় ২৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। ফেব্রুয়ারি মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয় ১০৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মুহাম্মদ এ হাফিজ অর্থসূচককে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের তুলনায় অনেক বেশি প্রশিক্ষিত। তাই তারা কোন দেশে বিনিয়োগের সময় সে দেশের সামগ্রিক চিত্র দেখে বিনিয়োগ করেন।
হাফিজ বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পেরেছে। আর আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এর ফলে বিদেশিরা কম দামে শেয়ার কিনে নিচ্ছেন। যখন বাজার ঘুরবে তখন তারা লাভবান হবেন। এক কথায় তাদের আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের তুলনায় আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। যার ফলে তাদের সফলতার হারও বেশি।
এ অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ড. মিজানুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সময় সুযোগসন্ধানী, তারা সুযোগ খুঁজে। যেখানে তারা লাভ করতে পারবে, সেখানেই তারা বিনিয়োগ করে।
তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক শেয়ার আকর্ষণীয় দামে রয়েছে। কম দামে তারা এই শেয়ার কিনে বেশি মুনাফা করার আশায় পুঁজিবাজারে সক্রিয় হচ্ছেন তারা।